ভাষা আন্দোলনে আল্লামা আতহার আলী রহঃ এর অবদান, যে ইতিহাস স্বিকার করে না কেউ!

BDBoiGhor.com
ভাষা আন্দোলনে আল্লামা আতহার আলী রহঃ এর অবদান, যে ইতিহাস স্বিকার করে না কেউ!
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা আল্লামা আতহার আলী রহ: এর ভূমিকা"খাইরুল ইসলাম হিমেল
ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা আল্লামা আতহার আলী রহ: এর ভূমিকা"
খাইরুল ইসলাম হিমেল[ br] শরীয়তের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অত্যন্ত বেশী। আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছেন:
وما ارسلنا من رسول الا بلسان قومه..
প্রত্যেক নবীকে আমি তাঁর জাতির ভাষা দিয়ে পাঠিয়েছি।
আর এ কারণেই আল্লামা আতহার আলী রহ: এর মন মস্তিষ্কে মাতৃভাষার গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত বেশি। তিনি যদিও বাংলা ভাষায় পারদর্শী এবং সাহিত্যিক ছিলেন না, বরং উর্দূ, আরবী ভাষাই তিনি বেশীর ভাগ লেখাপড়া করেছিলেন, এতদসত্ত্বেও বাংলা ভাষার উন্নতি এবং এ ভাষাকে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রচলিত করার জন্য তিনি আজীবন সর্বাত্মাক প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলেন।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, পাকিস্তান আমলে যখন কওমী মাদরাসায় বাংলা ভাষার আলাদা কোনো ব্যবহারিক তাৎপর্য ছিল না; বরং উর্দু ভাষাই ছিল শিক্ষার মাধ্যম, তখন তিনি তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া- এর পাঠ্যসূচীতে বাংলা ভাষার এতই গুরুত্ব প্রধান করেছিলেন যে, অধিকাংশ স্কুল -কলেজে সে সময় বাংলা ভাষার অনুরুপ গুরুত্ব ছিল না; বরং ইংরেজীর উপরই তখন অধিক গুরুত্ব দেওয়া হতো।
তিনি জামিয়াতে বাংলা ভাষাবিদ বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে মাতৃভাষার শিক্ষার উপর এতই জোর দিয়েছিলেন যে, তখন অনেক আলেম ভুল ধারণাবশতঃ তাঁর উপর এমন দোষারোপও করেছিলেন যে, তিনি আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়াকে কলেজে রুপান্তরিত করে ফেলেছেন।
কিন্তু আল্লামা আতহার আলী রহ: উপর এহেন বিরুদ্ধাচারণের কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি।বরং তিনি করো নিন্দাবাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে মাতৃভাষা বাংলা প্রসঙ্গে তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চালি যেতে থাকেন।
আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানীতে তাঁর উদ্যোগের ফলে বহু শিক্ষার্থী আগ্রহের সঙ্গে বাংলা ভাষা শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হয়।
বর্তমানে আলেম সমাজের মাধ্যে যে সকল ব্যক্তিত্ব জাতীয় ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, তাঁদের অনেকেই আল্লামা আতহার আলী রহ: এর শিক্ষা পাঠ্যক্রমের অধীনে এসে বাংলা ভাষা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন।
তিনি শুধু তাঁর নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বাংলা ভাষাকে চালু করে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি; বরং মু'তামীরুল মাদারিসিল কওমীয়া(কওমী মাদরাসা বোর্ড) গঠন করে দ্বীনী মাদরাসাগুলোর মধ্যেও মাতৃভাষা বাংলা চালু করার ব্যপারে সীমাহীন প্রচেষ্টা চালান।
কারন, তিনি এ বাস্তবতা খুব ভাল করেই জানতেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আলেম সমাজ বাংলা ভাষার উপর পান্ডিত্য অর্জন করতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা জাতিকে পরিপূর্ণভাবে পথনির্দেশনা দিতে পারবেন না। ফলশ্রুতিতে জাতিও তার হারানো অতীত গৌরব তথা তাহযীব -তামাদ্দুন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে না।
এ জন্যই তিনি আলেম সমাজের মধ্যে বাংলা ভাষা শিক্ষা ও চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদায় উন্নীত করার ব্যপারে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
"বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার ক্ষেত্রে আল্লামা আতহার আলী রহ: যে অবদান রেখেছিলেন"
এক. ১৯৫২ সালের ১৮,১৯,২০ মার্চ তারিখে কিশোরগঞ্জের হয়বতনগরে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ঐতিহাসিক সম্মেলনে সর্বমহলের বিশিষ্ট আলেমগণ অংশগ্রহন করেন।ওই ঐতিহাসিক সম্মেলনের প্রথম দিনেই অর্থাৎ ১৮ মার্চ তারিখে জমিয়তের কাউন্সি আল্লামা আতহার আলী রহ: এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবলীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবই ছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা প্রসঙ্গে।
দুই. বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার ব্যপারে শুধুমাত্র প্রস্তাব করেই তিনি ক্ষান্ত ছিলেন না; বরং তাঁর দলের সংবিদানেও এই দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান দিয়েছিলেন।
এটা শুধু দাবি হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল না, দলের আদর্শগত বিষয়েও পরিণত হয়েছিল।এমন কি, এটা শুধু পূর্ব পাকিস্তান নেযামে ইসলাম পার্টির সংবিধানেই নয়, বরং সাবেক পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজধানী করাচীতে যখন তিনি পশ্চিম পাকিস্তান নেযামে ইসলাম পার্টি গঠন করেন তখন সেই পার্টির সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার আদর্শগত ঘোষণা সংযোজিত করেছিলেন।
ফলে সন্দেহাতীতভাবে এই সত্যই প্রমাণিত হয় যে, অবিভক্ত পাকিস্তানের উভয় অংশ থেকে হযরত ছিলেন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপনকারী প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি পাকিস্তানের ভাষার দাবিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সমর্থন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছিলেন।
পশ্চিম পাকিস্তান নেযামে ইসলাম পার্টির জন্য প্রণীত মূলনীতিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা সংক্রান্ত সংবিধানিক আন্দোলনকে নিম্নলিখিত যে ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছিল তা হলো...
" উর্দূর সাথে বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।"
এই ছিল আল্লামা আতহার আলী রহ:এর রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার ভূমিকা....! তথ্যসূত্র হায়াতে আতহার উইকিপিডিয়া
ও বিভিন্ন ব্লগ..
লেখকঃ ইমরান হুসাইন
নির্বাহী সম্পাদকঃ পাবলিক ভিশন ২৪ ডটকম
পোস্ট লিংকঃ